মানবসভ্যতায় কাপড় বা ফেব্রিক শিল্পের আবির্ভাব
আজকের এই লেখনির মাধ্যমে আমরা জানার চেষ্টা করবো, মানবসভ্যতায় কাপড় বা ফেব্রিক শিল্পের আবির্ভাব ও তার আদ্যপ্রান্ত। মানুষের মৌলিক চাহিদার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে পোষাক, যা টেক্সটাইলে গার্মেন্টস নামে পরিচিত। আর গার্মেন্টস বা পোষাক তৈরির প্রধান উপাদান হলো কাপড় বা ফেব্রিক। কাপড় বা ফেব্রিক তৈরির টেকনিক: উইভিং হলো ফেব্রিক বা কাপড় তৈরির গুরুত্বপূর্ণ একটা টেকনিক। এই […]
আজকের এই লেখনির মাধ্যমে আমরা জানার চেষ্টা করবো, মানবসভ্যতায় কাপড় বা ফেব্রিক শিল্পের আবির্ভাব ও তার আদ্যপ্রান্ত। মানুষের মৌলিক চাহিদার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে পোষাক, যা টেক্সটাইলে গার্মেন্টস নামে পরিচিত। আর গার্মেন্টস বা পোষাক তৈরির প্রধান উপাদান হলো কাপড় বা ফেব্রিক।
কাপড় বা ফেব্রিক তৈরির টেকনিক:
কনটেন্ট টেবিল
উইভিং হলো ফেব্রিক বা কাপড় তৈরির গুরুত্বপূর্ণ একটা টেকনিক। এই পদ্ধতিতে দুটি পৃথক ইয়ার্ণ অথবা থ্রেড সমকোণে প্যাচিয়ে ফেব্রিক বা কাপড় গঠন করে। ফেব্রিক বা কাপড় তৈরিতে ব্যবহৃত দুটি ইয়ার্ণ হল ওয়ার্প ও ওয়েফ্ট ইয়ার্ণ।
উইভিং লুম কি?
উইভিং লুমে (মেশিন) ওয়ার্প ইয়ার্ণ শেড তৈরি করার মাধ্যমে ওয়েফ্ট ইয়ার্ণকে পাস করে ফেব্রিক বা কাপড় তৈরি করে, যাকে উইভিং বলে। অন্য ভাবে, ওয়ার্প ও ওয়েফ্ট ইয়ার্ণের ইন্টারলেসমেন্টের মাধ্যমে ফেব্রিক তৈরি করাকে ফেব্রিক বা কাপড় বলে।
উইভিং এর বিভিন্ন প্রকারের মধ্যে প্লেইন উয়েভ, সাটীন উয়েভ ও টুইল উয়েভ, যারা বিভিন্ন প্যাটার্ণ তৈরি করে যা বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত ফেব্রিক তৈরির জন্য ব্যবহৃত হয়।
ইতিহাস বলে যে, উইভিংয়ের সাথে মানব সম্পর্ক প্রস্তরযুগ থেকে।
উইভিং আবিষ্কারের ইতিহাস:
৫০০০ খ্রিস্টপূর্বে মিশরে ফ্লাক্স উইভিং পাওয়া যায়। ২০০০ খ্রিস্টপূর্বে প্রাচীন মিশরে সবচেয়ে ব্যবহৃত ফ্লাক্সের জায়গা দখল করে উল। লুম আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে উইভিং জনপ্রিয় হয়ে উঠে মানবসভ্যতায়। বাইবেলের বিভিন্ন জায়গায় উইভিং ও লুমের কথা বহুবার বলা আছে।
প্রাথমিক দিকে লুমে একজন বা দুইজন শ্রমিক কাজ করত। ৭০০ খ্রিস্টাব্দে এশিয়া, আফ্রিকা ও ইউরোপে উলম্ব ও আনুভূমিক লুমের ধারণা পাওয়া যায়। একই সময়ে পিট-থ্রিডল লুম (যেখানে হেডেল চালাতে প্যাডাল ব্যবহৃত হয়) আবিষ্কৃত হয়, যা সিরিয়া, ইরান ও পূর্ব আফ্রিকার ইসলামিক অংশবিশেষ এলাকায় পাওয়া গিয়েছিল।
ইসলাম ধর্মের রীতি অনুসারে পায়ের গোড়ালী থেকে গলা পর্যন্ত কাপড় পরিধান করার জরুরী যা কাপড় শিল্পের বিকাশে চাহিদা সৃষ্টি করে। ওই সময় সামজিক মর্যাদাস্বরূপ আফ্রিকান ধনীরা তুলার তৈরি কাপড় ও গরীবেরা উলের তৈরি কাপড় পরিধান করত।
১৯৭৭ সালে স্পেনের মরিশাসে মাটির নিচে শক্তিশালী ফ্রেমে তৈরি বিশেষ লুমে শাটল হাত দিয়ে ও হেডেল প্যাডাল দিয়ে চালানো হত, যা ছিল ইউরোপের আদর্শ লুম। মধ্য ইউরোপে উভেন বাড়িতে তৈরি করা হত ও মেলায় বিক্রি করা হত।
শিল্পবিপ্লব ও উইভিং এর প্রয়োজনীয়তা:
যুদ্ধ, প্লেগ রোগ, বিভিন্ন দুর্ভিক্ষ ও মহামারিতে কাপড়ের চাহিদা বেড়ে যেতে থাকে। তখন কাপড় বাড়িতে তৈরির পরিবর্তে বিশাল পরিমানের কাপড় তৈরির জন্য আলাদা জায়গায়, আলাদা পরিবেশের প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হয়। প্রথম দিকে ঔপনিবেশিক আমেরিকা গ্রেট ব্রিটেনের উপর কাপড়ের চাহিদা মেটানোর জন্য নির্ভরশীল ছিল।
তাই তারা নিজেদের চাহিদা মেটানোর জন্য স্থানীয়ভাবে তুলা ও উল দিয়ে তৈরি সুতা দিয়ে কাপড় উৎপাদন শুরু করে। প্রথম দিকে বীজ থেকে তুলা আলাদা করার জন্য পর্যাপ্ত শ্রমিকের অভাবে উল বেশি পরিমান ব্যবহৃত হত।
জীন কটন যন্ত্র (বীজ থেকে তুলা আলাদা করার যন্ত্র)আবিষ্কারের ফলে অল্প সময়ে বীজ থেকে সুতা আলাদা করা সম্ভব হয় এবং উলের পরিবর্তে তুলার ব্যবহার বেড়ে যেতে থাকে।ফ্লেক্সও হেম্প ব্যবহার হত উইভিংয়ের উদ্দেশ্যে। তখন প্লেইন উইভিং সবচেয়ে পছন্দিয় ছিল।
শিল্পবিপ্লবের ফলে উইভিং পদ্ধতিতে হ্স্তচালিত যন্ত্রের পরিবর্তে মেশিনের আবির্ভাব ঘটে। জন কী (John kay) ১৭৩৩ সালে ফ্লাইং শাটল মেশিন আবিষ্কার করেন। ফলে উইভিং শিল্পে গতি আসে এবং অল্প সময়ে ও খরচে অধিক প্রোডাকশন সম্ভব হয়। প্রথম উইভিং কারখানা ১৭৮৫ সালে যাত্রা শুরু করে।
জেকিউরিড লুম (Jacquird loom) ১৮০৩ সালে আবিষ্কৃত হয় যার সাহায্যে প্রোগ্রামিং করে খুব জটিল প্যাটার্নের ফেব্রিক সহজে তৈরি করা সম্ভব হয়। প্রথম দিকে সাদা ফেব্রিক ন্যাচারাল ডাইস ও উনিশ শতকের শেষের দিকে সিনথিটিক ডাইস দিয়ে প্রিন্টিং করা হত। আর এভাবেই ধীরে ধীরে বর্তমান প্রজন্মের উইভিং শিল্পের আগমন ঘটেছে।